সিঙাড়ার নাম শুনলেই মুখে জল আসে? আলুর পুর কিংবা মাংসের এমনকী চাউমিনের পুর ভরা সিঙাড়াও খেয়েছেন! কিন্তু নারকেলের পুর দেওয়া সিঙাড়া খেয়েছেন কখনও? দুর্গাপুরের সুবোধ চক্রবর্তী বছরের পর বছর ধরে বিক্রি করে চলেছেন নারকেল সিঙাড়া। বিহার থেকেও আসা বহু মানুষকে দেখা যায় তাঁর দোকানের সামনে। রইল সুবোধদার দোকানের গল্প।
বিখ্যাত নারকেল সিঙাড়া, বিহার থেকে খেতে আসে জনতা!





কথায় আছে, 'প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী'। তবে তার যে ব্যতিক্রম আছে তা বলাবাহুল্য। এই বাংলায় এই প্রবাদকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে কেবল গুণেই বাজিমাত সুবোধ চক্রবর্তীর জরাজীর্ণ ঠেলা গাড়ির বিখ্যাত নারকেলের সিঙাড়া। এই বিখ্যাত সিঙাড়া খেতে ভিড় জমান দূর দুরান্ত থেকে আসা বহু মানুষ।দুর্গাপুর রেল স্টেশন থেকে একশো মিটারের মধ্যেই পশ্চিম রেলগেটের কাছে একটি জরাজীর্ণ ঠেলা গাড়িতে করে সিঙাড়া সহ তেলেভাজা বিক্রি করেন সুবোধ। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সেখানে স্পেশ্যাল নারকেল সিঙাড়া বিক্রি করে আসছেন। বৃদ্ধ সুবোধের সহযোগিতায় থাকেন তাঁর পুত্র প্রভাত চক্রবর্তীও। বিকেল হতেই দেদার বিক্রি শুরু হয় নারকেল সিঙাড়ার। সন্ধ্যাবেলায় টিমটিমে আলো আঁধারের ঠেলাগাড়ির সামনে ভিড় করেন নারকেল সিঙাড়া প্রেমীরা। স্থানীয় ও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন তো আসেনই। এছাড়াও আসানসোল, বাঁকুড়া সহ বিহারের বাসিন্দারাও নারকেল সিঙাড়ার টানে ওই জরাজীর্ণ ঠেলা গাড়িটির সামনে ভিড় করেন।
সুবোধবাবু জানান, তিনি তাঁর দাদা'র কাছ থেকে নারকেল সিঙাড়া তৈরি করতে শিখেছিলেন। নারকেল কোঁড়া, কাঁচা পেয়াজ ও লংঙ্কা কুঁচি আর চিনাবাদাম দিয়ে ওই সিঙাড়া তৈরি হয়। তাতে লবন ও চিনি ছাড়া আর কোনও মশলা ব্যবহার হয় না।এই সুস্বাদু নারকেল সিঙাড়া একবার যে খাবেন তিনি বারবার আসবেন সিঙাড়া খাওয়ার জন্য। অন্তত দাবি এমনই। ব্যবসার শুরুতে ১ টাকা ৫০ পয়সা করে সিঙাড়া বিক্রি করতেন। বর্তমানে ৬ টাকা করে বিক্রি করেন। প্রতি সিঙাড়া পিছু ১ টাকা লাভ থাকে। তাঁর কম লাভ হলেও মানুষ তো তাঁর সিঙাড়ার স্বাদে মুগ্ধ। তাতেই তিনি খুশি।প্রতিদিন প্রায় ৪০০ সিঙাড়া বিক্রি হয়। এছাড়াও ব্রেড চপ, আলুর চপ ও ভেজিটেবল চপ সহ একাধিক রকমের ভাজাভুজি বিক্রি করেন তিনি। সুবোধবাবুর পুত্র প্রভাত চক্রবর্তী জানান, বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ নারকেল সিঙাড়া খাওয়ার জন্য আসেন। দুর্গাপুরে আর কোথাও এই সিঙাড়া বিক্রি হয় না। স্থানীয় গ্রাহক দিব্যেন্দু সিনহা ও অঞ্জনা সিনহা বলেন, 'আমরা দীর্ঘ প্রায় ২০-৩০ বছর ধরে সুবোধবাবুর নারকেল সিঙাড়া খাচ্ছি। তাঁর ঠেলাগাড়ির স্পেশ্যাল আইটেম নারকেল সিঙাড়া ব্যাপক সুস্বাদু। বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ ইজাজ, ইমরান ও মহম্মদ আনসার জানান, এই নারকেল সিঙাড়া বেঙ্গল স্পেশ্যাল। বিহারে পাওয়া যায় না। আমরা কর্মসূত্রে দুর্গাপুরে থাকি। প্রায় প্রতিদিন নারকেল সিঙাড়া খাওয়ার জন্য সুবোধবাবুর দোকানে আসি। খুব সুস্বাদু নারকেল সিঙাড়া।'