বছরের পর বছর ধরে বিতর্ক চলার পর এলাহাবাদ হাইকোর্ট প্রথম এএসআই-কে সার্ভে করার নির্দেশ দেয়। প্রথমে করা হয় জিপিআর সার্ভে বা গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং র্যাডার সার্ভে। এই পদ্ধতিতে মাটি খনন না করেই সমীক্ষা করা যায়, নীচে কোনও নির্মাণ আছে কি না, থাকলে তা কত বড়।
অযোধ্যার মাটির তলায় কী কী মিলেছিল





দীর্ঘ আইনি জটিলতার পর ২০১৯ সালে রাম মন্দির মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাম মন্দির তৈরির জন্য বিতর্কিত জমি তুলে দেওয়া ট্রাস্টের হাতে। হয় তৈরি হয়েছ এরপরই শুরু হয় রাম মন্দির তৈরির প্রস্তুতি। আগামী ২২ জানুয়ারি, সোমবার হবে সেই মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। যে সব তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম এএসআই বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-র রিপোর্ট। বিতর্কিত জমি খনন করে রিপোর্ট তৈরি করেছিল এএসআই। রিপোর্টে কী ছিল, তার উল্লেখ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সেই ঐতিহাসিক নির্দেশনামায়।বছরের পর বছর ধরে বিতর্ক চলার পর এলাহাবাদ হাইকোর্ট প্রথম এএসআই-কে সার্ভে করার নির্দেশ দেয়। প্রথমে করা হয় জিপিআর সার্ভে বা গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং র্যাডার সার্ভে। এই পদ্ধতিতে মাটি খনন না করেই সমীক্ষা করা যায়, নীচে কোনও নির্মাণ আছে কি না, থাকলে তা কত বড়। কী কী থাকতে পারে, তার একটা আন্দাজও পাওয়া যায়। এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সেই সার্ভে করায় এএসআই। সেই রিপোর্ট দেখে হাইকোর্ট খনন কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়। কাটা হয় ৯টি পরিখা। এরপর শুরু হয় খননকাজ।
সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশনামায় উল্লেখ রয়েছে এএসআই-এর সেই রিপোর্ট। কী কী পাওয়া গিয়েছিল, তার বর্ণনা রয়েছে সেই রিপোর্টে। এএসআই দাবি করেছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, মাটির তলায় যে নির্মাণ পাওয়া গিয়েছিল, তা তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে, বলা ভাল বিভিন্ন যুগে। কুশন যুগ, গুপ্তা যুগ পেরিয়ে মুঘল যুগের পর্যন্ত ছাপ পাওয়া যায় মাটির তলায়।রিপোর্টের দশম অধ্যায়ে রয়েছে উপসংহার। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মাটির নীচে যে এক বিশালাকার নির্মাণকাজ ছিল, তার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। যে জায়গার দৈর্ঘ্য অন্তত ৫০ মিটার লম্বা, প্রস্থ ৩০ মিটার। সেখানে মিলেছে ৫০টি স্তম্ভ, ইট দিয়ে তৈরি ভিত্তি, বালু পাথরের ব্লক। এক বিশাল দেওয়াল যে ছিল, সেটাও বুঝতে পারেন নৃতত্ত্ববিদরা। পাওয়া গিয়েছিল কোনও দেব-দেবীর ভাঙাচোরা মূর্তি।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মাটির তলার সেই ভবনের ভিতর একটি উঁচু জায়গায় দেখা গিয়েছিল, যা দেখে বোঝা যায় গুরুত্বপূর্ণ কোনও জিনিস সেখানে রাখা ছিল। যে পরিখাগুলি কাটা হয়েছিল, তার মধ্যে মিলেছিল টেরাকোটা ল্যাম্প। বেশ কয়েকটি স্তরে পাওয়া গিয়েছিল মানুষের হাড় ও মাথার খুলি। সেগুলি বিভিন্ন সময়ের বলে দাবি করেছেন নৃতত্ত্ববিদরা।
সুঙ্গা ও গুপ্তা যুগের এমন কিছু নির্মাণের খোঁজ মিলেছিল, যার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কী ছিল, তা বোঝা যায়নি। তবে ওই জায়গায় যে মুঘল যুগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যাতায়াত ছিল, সেটাই বলা হয়েছে এএসআই-এর রিপোর্টে। ত্রয়োদশ শতকে ওই ভবনে যে সাধারণের যাতায়াত ছিল বলে অনুমান করা হয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ওই সময়কাল বের করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। তবে ভবনের নির্মাণ বলে দেয়, দশম শতক থেকেই ছিল তার অস্তিত্ব। তারপর ধাপে ধাপে হয়েছে নির্মাণকাজ। রিপোর্টের একেবারে শেষ পর্যায়ে উল্লেখ রয়েছে কিছু স্থাপত্যের নিদর্শণের কথা, সংস্কৃতে যেগুলির নাম – আমলাকা, কপোতাপলি, প্রানালা। পদ্মের আকারের কারুকার্য সহ আরও অনেক নিদর্শন পায় এএসআই।